রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন

টেন্ডার ছাড়াই বনবিভাগের ৮ লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ

টেন্ডার ছাড়াই বনবিভাগের ৮ লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ডোকলাখালী এলাকায় ভূয়া দরপত্র দেখিয়ে উপকূলীয় সবুজ বনায়নের প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৬৪টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম শাহিনের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. তানিয়া ফেরদৌস গোপনে অতিরিক্ত গাছ কাটার বিষয়ে সত্যতা পান।

এ সময় তিনি একটি গাছবোঝাই ট্রাক আটক করেন এবং গাছ ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেনকে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গাছ কাটতে ও নিতে নিষেধ করেন। পরে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে এলাকাবাসীর হট্টগোলে তোপের মুখে পড়েন।

জানা যায়, উপকূলীয় বনবিভাগের বাস্তবায়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে সবুজ বেস্টনি প্রকল্পের আওতায় সড়কের উন্নয়নের স্বার্থে চত্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেড়েরধন নদী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পাকা সড়কের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এজন্য ২১০ মিটার বেড়িবাঁধ-এর দুই সাইটে সবুজ বনায়নের গাছ অপসারনের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি মির্জাগঞ্জের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি বিভাগ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গাছ অপসারণের জন্য একটি পত্র দেন।

এর পরিপ্রিক্ষিতে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মানুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বনকর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রাস্তার গাছ অপসারণের জন্য ২১০ মিটার রাস্তার গাছ মারকিং করে উপজেলা পরিষদের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বানের পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী, ২১০ মিটার রাস্তার গাছ অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বান করে। উক্ত গাছ অপসারণের কাজটি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে স্থানীয় এক গাছ ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন কাজটি পান।

উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম শাহিন মিয়া গাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২১০ মিটার রাস্তার গাছের সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া আরও ৪০০ মিটার সড়কের গাছ কেটে নেন। যার আনুমানিক মূল্য ৮ লক্ষাধিক টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছও রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এলাকাবাসী বলেন, বন কর্মকর্তা প্রথমে ব্যক্তি মালিকানা গাছ না কাটার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। তাদের টাকা না দিলে ব্যক্তিগত রোপনকৃত গাছগুলো তারা কেটে নেয়।

উপকুলীয় সবুজ বনায়নের সভাপতি মো. আবদুল বারেক হাওলাদার বলেন, উপজেলা বন কর্মকর্তাকে যে পর্যন্ত রাস্তা দেখিয়েছি তার চেয়ে বেশি গাছ কেটেছেন।

উপকারভোগী ডোকলাখালী গ্রামের মো. সানু মোল্লা, চত্রা গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম ও সোহাগ খান বলেন, ‘আমরা নিজেরা আমাদের রেকর্ডীয় মালিকানা জমিতে গাছ লাগিয়েছি। সরকারিভাবে যখন বনবিভাগ বনায়ন করে তখন তারা বলছে ব্যক্তি মালিকানা গাছ আপনারা পাবেন। এখান থেকে ৪০ শতাংশ বনায়নের অংশীদার হবেন। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। অথচ সড়কের গাছ মারকিং এর সময়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার দাবি করেন। টাকা দিলে আমাদের গাছ দেওয়া হবে। টাকা না দেওয়ায় মারকিং ছাড়াও সকল গাছ কেটে নিয়েছে।’

ঠিকাদার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘উপজেলা বন কর্মকর্তা যে গাছগুলো মারকিং করেছে সে গাছগুলো আমি কেটেছি।’

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম শাহিন মিয়া বলেন, ‘জেলা বনবিভাগ থেকে ২১০ মিটার গাছ টেন্ডার করার কথা থাকলেও রাস্তার সবুজ বনায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই বাড়তি টেন্ডার দেখিয়েছিলাম, রাস্তার বাকি গাছ ও টেন্ডারের আওতায় আনা হবে। তবে আমি কারও কাছে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করিনি।’

জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা বন কর্মকর্তা মো. আবদুল্লা আল মামুন বলেন, রাস্তা সংস্করণ করার জন্য মির্জাগঞ্জ উপজেলা এলজিআরডি অফিস থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১০ মিটার রাস্তার পার্শ্ববর্তী গাছগুলো টেন্ডার আহ্বান করার জন্য অনুমতি দিয়েছি। এর বেশি যদি বনায়নের গাছ টেন্ডার দেখিয়ে কাটা হয়, তাহলে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি সকল গাছ কাটার সত্যতা মিলেছে। একটি গাছবোঝাই ট্রাক আটক করা হয়েছে। বন বিভাগের ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এসে তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নিবেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877